বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

কলকাতা | Microbiology: আকর্ষণীয় কেরিয়ার গড়ার প্রশ্নে এক দশক পরেও চাহিদা কমবে না অণুজীববিদ্যার

Riya Patra | ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৭ : ৪০Riya Patra


ড.‌ ভাস্কর চৌধুরি: মাইক্রোবায়োলজি বা অণুজীববিদ্যা হল জীববিজ্ঞানের একটি শাখা যা অণুজীবের অধ্যয়ন নিয়ে কাজ করে। এই বিষয়ে যেমন গবেষণার বৈচিত্রপূর্ণ সুযোগ রয়েছে, তেমনই সংক্রামক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ রাখার পরিবর্তে নতুন প্রজন্মের মাইক্রোবায়োলজিস্টরা খাদ্য–উৎপাদন, পরিবেশ বিজ্ঞান, ওষুধ ও মৌলিক গবেষণার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাল জীবাণুর ভূমিকা ব্যবহার করেন। এই ক্ষেত্রে প্রচুর কর্মজীবনের সুযোগ থাকার কারণে, মাইক্রোবায়োলজিস্টরা হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, শিল্প, ক্লিনিকাল গবেষণা, কৃষি, রাসায়নিক ও ন্যানোপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন। যদিও অতীতে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের কাজকর্ম কেবলমাত্র পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ, মাইক্রোবিয়াল প্রভাবের ক্রমবর্ধমান বোঝাপড়া কেরিয়ারের নতুন সুযোগের দিকগুলো খুলে দিয়েছে। বৈচিত্রময় পেশাগত সম্ভাবনার কারণে, এই ক্ষেত্রটি এখন ফরেনসিক বিজ্ঞানী থেকে খাদ্য–নিরাপত্তা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ থেকে জৈব–নিরাপত্তা অফিসার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ এনে দেয়।
মাইক্রোবায়োলজিস্টদের অণুবীক্ষণিক জীবের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত দিক নিয়ে তদন্ত করা, বিশ্লেষণ করা ও তার ফলাফল সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি একটি পেশাদারি কোর্স হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
মাইক্রোবায়োলজি কোর্সটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, দেশের অন্যান্য রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়। কোনও শিক্ষার্থী মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে উচ্চমাধ্যমিকের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারে।
মাইক্রোবায়োলজি কোর্সের ছাত্রছাত্রীরা বিএসসি এবং এমএসসি‌ ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। নতুন শিক্ষানীতি (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০) অনুযায়ী স্নাতক ডিগ্রি পূর্ণ করার সময়সীমা চার বছর। এই চার বছর সময়সীমার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের মাইক্রোবায়োলজি ও এই সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়গুলির ওপর থিওরেটিক্যাল, প্র‌্যাকটিক্যাল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। স্নাতক ডিগ্রি লাভের পরেই এই কোর্সে উত্তীর্ণদের সামনে বহুবিধ চাকরির পথ খুলে যায়। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়মিত ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করা হয় যেখানে দেশ–বিদেশের নামী সংস্থাগুলি ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি নিয়োগ করে। এক্ষেত্রে ওষুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, পানীয় প্রক্রিয়াকরণ, খাদ্য, বীজ, জৈবসার প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি সম্পর্কিত সংস্থাগুলি তাদের প্রয়োজন অনুসারে ছাত্রছাত্রীদের বেছে নেয়।
স্নাতক সম্পূর্ণ করার পর অনেকে উচ্চশিক্ষার পথ বেছে নেয়। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা স্নাতকোত্তর (এমএসসি) এবং গবেষণা (পিএইচডি)–র পথ বেছে নিতে পারে। স্নাতকোত্তর স্তরে মাইক্রোবায়োলজি সম্পর্কিত অত্যাধুনিক বিষয় পড়ানো হয় এবং নির্দিষ্ট কোনও অধ্যাপকের অধীনে বিশেষ কোনও বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ অথবা ডেজারটেশন জমা করতে হয়। এর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি অথবা রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পায়।
মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার পর ছাত্রছাত্রীরা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করার কথাও ভাবতে পারে। বহু ছাত্রছাত্রী সাম্প্রতিক অতীতে ছোট মাপের ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেঁচোসার, জৈবসার, পানীয় প্রক্রিয়াকরণ, দুগ্ধজাত পণ্য ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে মাইক্রোবায়োলজি ছাত্রছাত্রীরা আর্কষণীয় কেরিয়ার গড়ে তুলতে পারে।
একজন মাইক্রোবায়োলজিস্টের কাজ এবং দায়িত্বগুলির মধ্যে নীচের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত:‌
• গবেষণা: মাইক্রোবায়োলজিস্টরা বিভিন্ন সনাক্তকরণ পদ্ধতি, অণুজীবের বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত দিক এবং বাইরের পরিবেশের সঙ্গে তাদের মিথষ্ক্রিয়া ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপিক জীবের ওপর গবেষণা চালান।
• নমুনা সংগ্রহ: বিভিন্ন স্থান থেকে অণুজীব সমন্বিত নমুনা সংগ্রহ করা, তথ্য নথিবদ্ধ করা, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা মাইক্রোবায়োলজিস্টদের কাজ।
• পরীক্ষাগার পরিষেবা: রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে স্বাস্থ্যবিভাগ, চিকিৎসক ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির সঙ্গে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা যুক্ত হন।
• চিকিৎসা সম্পর্কিত:‌ মাইক্রোবায়োলজিস্টরা ওষুধ, টিকা (‌ভ্যাকসিন)‌, অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। নতুন কোনও রোগ ছড়িয়ে পড়ার রোধে কৌশল ও পরিকল্পনা পদ্ধতি তৈরির দায়িত্ব তাঁদের ওপরই বর্তায়।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষের পর অনেকেই গবেষণার পথ বেছে নেন। সিএসআইআর–ইউজিসি‌ পরিচালিত ‘নেট’ (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট) বা ‘সেট’ (স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট) পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণায় (পিএইচডি) সুযোগ মিলতে পারে। ‘নেট’ অথবা ‘গেট’ উত্তীর্ণ প্রার্থীরা গবেষণার মেয়াদে ফেলোশিপ পান। গবেষণার সুযোগ পেতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি‌র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করতে হয় এবং সুযোগ পেলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। এছাড়াও নেট বা সেট উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার (‌অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে)‌ জন্যও আবেদন করতে পারেন।
বহু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা তাদের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) অথবা পিএইচডি‌ ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বিভিন্ন এনজিও–তে ছাত্রছাত্রীরা মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিষয়ক পদে আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে বা প্রোজেক্ট অফিসার হিসেবেও ছাত্রছাত্রীরা কাজ পেতে পারে। এছাড়া সরকারি চাকরির যে কোনও পরীক্ষাতেও মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারে।
মাইক্রোবায়োলজি মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বা ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়া উদ্ভাবনে অণুজীবের থেকে সংগৃহীত উৎসেচকগুলোর প্রয়োগ কৌশলের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে। মাইক্রোবায়োলজিতে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াগুলো অধিকতর মাত্রায় উন্নত পণ্য বা প্রক্রিয়া প্রস্তুতকরণের জন্যে জিনগতভাবে পরিবর্তিত অণুজীবগুলিকে (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মাইক্রোবস) কাজে লাগায়। এছাড়া আরও অনেক কৌশল বা প্রযুক্তি মাইক্রোবায়োলজির অর্ন্তগত, যার মধ্যে গবেষণাগারে কৃত্রিম নিষেক পদ্ধতির দ্বারা ভ্রূণগঠন, জিন সংশ্লেষ ও এর ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবাণুঘটিত রোগের ভ্যাকসিন প্রস্তুতি অথবা কোনও ক্ষতিগ্রস্ত জিন সংশোধনের (জিন থেরাপি) মাধ্যমে কোনও বংশগত রোগকে সারিয়ে তোলা, এমন অনেক কিছুই মাইক্রোবায়োলজির অন্তর্ভুক্ত।
আগামী দিনে কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে মাইক্রোবায়োলজি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সর্বদাই অপেক্ষমান থাকবে।




বিশেষ খবর

নানান খবর

শীঘ্রই আসছে...

নানান খবর

দায়িত্ব নিয়েই আরজি করে নতুন নগরপাল, বৈঠক করলেন অধ্যক্ষের ঘরে...

কথা বলে ‘ধোঁয়াশা’ কেটেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডেকরটার্স বিতর্ক নিয়ে জবাব চিকিৎসকদের...

আরজি কর কাণ্ডে ডাক সিবিআই-এর, ‘সবরকম সাহায্য’ করতে সিজিওতে মিনাক্ষী ...

স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণের দাবি, ফের রাজ্যকে ই-মেল, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত ...

রাতের শহরে ফের আক্রান্ত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট, চিকিৎসা করাতে নিজেই ছুটে গেলেন হাসপাতালে...

খাস কলকাতায় ফের প্রোমোটারের দাপাদাপি, আহত ১

'যদি কাগজে লেখ নাম', কর্তব্যরত নার্সকে প্রেমপত্র দিয়ে বিপাকে যুবক...

নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথন, অংশগ্রহণ করল ৯২টি দল...

সোম-রাতে বলেছিলেন মমতা, মঙ্গলে পুলিশের সঙ্গেই বড় বদল স্বাস্থ্যেও ...

কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, বিনীত হলেন এডিজি এসটিএফ ...

পড়ুয়াদের দক্ষ ও শিল্পমুখী করে তোলার বিশেষ প্রচেষ্টা এসএনইউ’‌র ...

কালীঘাটে মমতার বাড়িতে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে হল বৈঠক, মিলল সমাধান?‌ ...

প্লাবিত এলাকা নিয়ে চিন্তিত মমতা, দিলেন এই নির্দেশ ...

সরকার এবং ডাক্তারদের নিঃশর্ত আলোচনা জরুরি, নয়তো নৈরাজ্যের পথে চলে যাবে পশ্চিমবঙ্গ...

চিকিৎসকদের শর্ত মানল রাজ্য, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা...



সোশ্যাল মিডিয়া



03 24